Friday, June 4, 2010

সমাস / সুকুমার বড়ুয়া

...
কথার সাথে বার্তা এল ঘরের সাথে বাড়ি
চোরের সাথে ডাকাত মিলে করছে কি বাটপাড়ি ?
গাড়ির সাথে ঘোড়া থাকে যানের সাথে বাহন
রাজার সাথে প্রজা যদি মিলতে রাজি না হন ?
দোষগুণে আর শাদাকালোয় সদাই থাকে মিশে
ঝড়ের সাথে তুফান এলে হারাও কেন দিশে ?
মাথার টানে মুণ্ডু এনে হাসবে কেন হিঃ হিঃ
সমাসটা কি দ্বন্দ্ব হবে নাকি বহুব্রীহি ?
...

চিন্তা নিয়ে ভাবনা / সুকুমার বড়ুয়া

...
চোখেও দেখা, হাতেও ধরা যায় না কোনো দিন তা,
কেমন করে মাথায় ঢোকে এত রকম চিন্তা ?
কোথায় তাদের চাষ হল বা কোথায় যে উৎপত্তি
খবরটুকু কেউ কোনো দিন পায় নিকো এক রত্তি।
মাথার ভেতর ঢুকেই সে যে জড়িয়ে ধরে মনকে
মিথ্যা এবং ভুলের পথে নেয় সে কত জনকে।
চিন্তা কারুর মাথায় ঢুকে দেয় ফিরিয়ে ভাগ্য,
ঘর ছেড়ে কেউ বাইরে এসে লাভ করে বৈরাগ্য।
চিন্তা কারুর ভালোই করে--কারুর করে মন্দ,
কেউ হয়ে যায় পাগল--কারুর চোখ থেকেও অন্ধ।
মাথায় কারুর টাক পড়ে আর কেশ যে 'অকালপক্ক'
হাটবাজারে পথে-ঘাটে দেখবে কত লক্ষ।

মজার খাদ্য / সুকুমার বড়ুয়া

...
কহিলেন আরশোলা
নেংটিরে ডাকিয়া
ঐ দেখ গৃহকোণে
কাঠের যে তাকিয়া

তার মাঝে সারে সার
বই কত মজাদার
পণ্ডিত মহাশয়
গিয়াছেন রাখিয়া।

রূপকথা ইতিহাস
গোয়েন্দা গল্প
দ্বিমাসিক পাক্ষিক
সে কি আর অল্প ?

আয় তোরা দলে দলে
ওই ফাঁকে যাই চলে
দামি দামি কিতাবের
মাঝখানে থাকিয়া
নাতিপুতি বড় হবে
সেই সব চাখিয়া।
...

অমুক / সুকুমার বড়ুয়া

...
অমুক দেশের অমুক
পরের মাথায় কাঁঠাল রেখে
কোয়া খাবেন একে একে
মুচকি হেসে বলেন আবার
তোমার বোঝা কমুক।
ভাগ্য দোষে আমার পেটেই
জমছে বোঝা জমুক--
সে যে অমুক দেশের অমুক।
...

ঠেকা / সুকুমার বড়ুয়া

...
এমন ঠেকা ঠেকছি রে ভাই
এমন ঠেকা ঠেকছি--
পেটের জ্বালায় বেইচা দিলাম
হাঁড়ি পাতিল ডেকচি।
বাড়িত যাইয়া মাথায় বাড়ি,
কই পামুগো রাঁধার হাঁড়ি !
পাতিল বেইচা চাউল নিয়া
ডবল বিপদ-- দেখছি।
ভাতের বদল চাল চাবাইয়া
তিনটা গেলাস পানি খাইয়া
পেটের ভিতর ভাত রানতে
আগুন দিয়া ছেঁকছি
এই দুনিয়ায় জনম নিয়া
বিষম ঠেকা ঠেকছি।
...

ওলট-পালট / সুকুমার বড়ুয়া

...
সে-দিন কি আর আছে রে ভাই
সে-দিন কি আর আছে ?
জ্যান্ত মানুষ গায়েব করে
লাশগুলো সব নাচে।

ওষুধ খেলে অসুখ বাড়ে
পরিশ্রমে ভাগ্য ছাড়ে
শুকনো পাতা ব্যাঙ্কে বোঝাই
টাকার প্যাকেট গাছে।

সেদিন কি আর আছে রে ভাই
সেদিন কি আর আছে ?
মামার জোরে পাহাড় ওড়ে
চাপার জোরে বাঁচে।

গরম টাকা পড়লে হাতে
সূর্য ওঠায় দুপুর রাতে
গরিব দেখে চক্ষু রাঙায়
হাটের পচা মাছে
সে-দিন কি আর আছে ?
...

এক যে আছে / সুকুমার বড়ুয়া

...
ভয় নেই তার ডর নেই তার
নেইকো তাড়া চাকরির,
নেইকো হিসাব মরিচ পিঁয়াজ
কাপড় জামা, লাকড়ির।

লজ্জা-শরম একটুও নেই
জয় কি পরাজয়ের
হাজার গণ্ডা বাঘের মুখে
ধার ধারে না ভয়ের।

হারিয়ে গেলে ইষ্টিকুটুম,
ধ্বংস হলে বাড়ি,
একটা কিছু করার মতো
ভাববে না দরকারি।

কাঁদার নিয়ম / সুকুমার বড়ুয়া

...
একটা কাঁদে নেচে নেচে
একটা কাঁদে গড়িয়ে
একটা কাঁদে ধুলোর উপর
হাত-পাগুলো ছড়িয়ে।
একটা কাঁদে গানের মতো
একটা কাঁদে নাকে,
আরেকটাত কাঁদার সময়
আকাশ চেয়ে থাকে।
একটা কাঁদে প্যারেড করে
হাত-পা ছুঁড়ে লাফিয়ে
একটা কাঁদে গলার স্বরে
মহল্লাটা কাঁপিয়ে।

শিয়াল মন্ত্রী / সুকুমার বড়ুয়া

...
শিয়াল নাকি লোভ করে না
পরের কোনো জিনিসটার
কী পরিচয় দিল আহা
কী সততা ! কী নিষ্ঠার !
তাই সে হল বনের মাঝে
এডুকেশন মিনিস্টার।
...

নেই / সুকুমার বড়ুয়া

...
দিনদুপুরে ঘর ডাকাতি
পানি তোলার লোটাও নেই
সর্ষেতেলের বোতল গায়েব
তেল তাতে এক ফোঁটাও নেই
সরু চালের ভাণ্ড উজাড়
চাল তাতে আর মোটাও নেই
তিনটে গেল মিষ্টি কুমোড়
তার কোনো এক বোঁটাও নেই
ছাগল বাঁধার দড়ি গেছে
দড়ির মাথায় খোঁটাও নেই
আরেক মাথায় ছাগল ছিল
এখন দেখি ওটাও নেই।
...

আজব ফল / সুকুমার বড়ুয়া

...
হৈ হৈ কাণ্ড ! রৈ রৈ 'বেয়াপার'
কেউ ধরে মেল ট্রেন কেউ হয় খেয়াপার
ছুটে আসে দলে দলে করে দম বন্ধ,
কাল চিল পেল যেন মাংসের গন্ধ।
মাছে ভরা বিলে যেন ছোটে বক পক্ষী
ঝোলা গুড় দেখে যেন ছুটে আসে মক্ষী,
তেমনি সে লোকগুলো প্রাণপণ ছুটছে
শহরের উঁচু এক দালানেতে জুটছে।

ভেজাল / সুকুমার বড়ুয়া

...
খাদ্যে ভেজাল পথ্যে ভেজাল
ভেজাল শখের জিনিসে,
চলছে ভেজাল দিল্লি-ঢাকা
বিলেত-জাপান-ভিনিসে।
ভেজাল কত রইল মিশে
মানুষজনের চরিত্রে,
অমনি শাদা, অমনি কালো,
অমনি কেন হরিৎ-রে ?
হিংসাতেও ভেজাল থাকে
নইলে আবার মিলে যে,
স্নেহের ভেজাল ধরতে পারি
কানমলা-চড় কিলে যে।