Friday, August 20, 2010

সর্দিবদ্ধ ছড়া / আবদার রশীদ

...
[সাবধান : এ ছড়া মুখস্থ করার চেষ্টা করলে সর্দি লেগে যেতে পারে !]

বাঘবাসে ভুগি ডাই ঠাড্ডায়,
ফাল্গুডে পড়িলাব গাড্ডায়,
সর্দিতে হল ডাক বদ্ধ,
পাইডাকো আর কোডো গদ্ধ ।
        আব গাছে ধরেছে বুকুল,
        গুডগুড্ করে অলিকুল,
        টুড্টুডি সজডের গাছে
        গাড্ গায় আর খালি ডাচে।
ডিবগাছে ঝুরুঝুরু ফুল,
বৌবাছি বধুতে আকুল।
বহুয়ার বদির সুবাস
বাতাল হয়েছে বধুবাস !

মারামারি / আবদার রশীদ

...
কারে বলি, কত বলি,
              আর যে না পারি রে,
চারিদিকে চেয়ে দেখি
              শুধু মারামারি রে !
মায়ে মারে, বাপে মারে
              সেটা তবু সহা যায়,
'চাল' এসে মারে যদি
              সে তো বাপু মহা দায় !
'কাঁচি', 'ল্যাঙ', 'প্যাঁচ' এসে
              মারে যত ইচ্ছে
যত দাও উপদেশ,
              কেবা কানে নিচ্ছে !

গরুচোর ! / আবদার রশীদ

...
গরুচোর বলে তারে
               ক'রো নাকো তুচ্ছ !
নিন্দুকে অকারণে
               রটাচ্ছে কুচ্ছো ।
গরু ছাড়া আর কিছু
               করে না তো চুরি সে !
তাও তো করেছে চুরি
               মোটে গোটা-কুড়ি সে ।
একদিন কি কাণ্ড
               হয়েছিল শোনো ভাই,
আমাদের বাড়ি থেকে
               নিয়ে গেল দুটো গাই !

চড়ুইভাতি / আবদার রশীদ

...
চড়ুইভাতির পাশেই নদীর কূল ছিল,
আনন্দে তাই সবার গলাই খুলছিল ।
ফুর্তিতে, খোশ গপ্পেতে মশগুল ছিল,
মাথায় তাদের হাল ফ্যাশানের চুল ছিল ।
            জনাচারেক আলুর খোসা ছুলছিল,
            গলায় তাদের রুমাল কি টাই ঝুলছিল ।
            দলের সাথে তিনঠেঙে এক টুল ছিল,
            সেটায় বসে দলের নেতা ঢুলছিল ।

কেউ কি জানে ? / আবদার রশীদ

...
কেউ কি জানে কখন বসে
             তেঁতুল পাতায় ন'জন ?
পটল পেলে সবাই তো খায়,
             তুলতে জানে ক'জন ?

গুড়ের, পাটের, সব দালালের
             সবাই রাখে খবর,
কেউ কি জানে কোথায় থাকে
             আসল দালাল 'ফপর' ?

পেলিক্যান / আবদার রশীদ

...
বল্ তো বেআক্কেলে পেলিক্যান,
এত বড় ঠোঁট নিয়ে এলি ক্যান ?

ওটা কি কড়াই, ডাল রাঁধবার ?
অথবা নৌকো, ঘাটে বাঁধবার ?
কিংবা কাপড়-ধোয়া গামলা ?
নাকি ওটা আর-কোনো মামলা ?

ঠোঁট তো ঠোঁটের মতো হওয়া চাই-
ঠোট নয় আলমারী চারপাই !

যতটুকু লাগে তোর পেলিক্যান,
তার চেয়ে বেশী তুই পেলি ক্যান্ ?
...

লক্ষী ছেলে ! / আবদার রশীদ

...
ঐ দেখা যায় লক্ষ্মী ছেলে
                পাঠ্য কেতাব পড়ে,
ঘাড়ের ওপর মুণ্ডুখানা
                হালকা তালে নড়ে ।

বানের তোড়ে বাঁধ ভেঙে যায়
                দেশ ভেসে যায় জলে,
ডাকাত এসে আগুন লাগায়
                কাদের বাড়ি জ্বলে,
কার বাড়িতে পড়ল রে বাজ,
                উড়ল ঝড়ে চাল-
তারই খোঁজে দাপিয়ে বেড়ায়
                দস্যি ছেলের পাল ।

কিন্তু আহা ! লক্ষ্মী ছেলে
                পাঠ্য কেতাব খুলে,
ইতিহাসের বীর-কাহিনী
                পড়ছে দুলে দুলে ।
...

চোর পালালো---- / আবদার রশীদ

...
চোর পালালো ভালোই হল
            চ্যাঁচাস কেন তেড়ে ?
বুদ্ধি-মীটার দেখ লাগিয়ে
            বুদ্ধি গেছে বেড়ে ।

                   এত বুদ্ধি রাখবি কোথায়
                           মাটিতে রাখ পুঁতে
                   সেই খানেতে দেখবি পরে
                           গাছ হয়েছে তুঁতে !

অ্যালার্জি / আবদার রশীদ

...
কক্ষনো নয়, কক্ষনো নয় !
মোটেই আমি পাইনাকো ভয়
             রাতের বেলা একলা শুয়ে ঘরে ।
যখন শুধু নিভলে বাতি
কাঁপিয়ে আসে আঁধার রাতি
             গা'টা যেন কেমন কেমন করে !
হঠাৎ কারা খাটের পাশে
ফিসফিসিয়ে বিশ্রী হাসে,
             হাওয়ার মতো খসখসিয়ে হাঁটে !
কড়কড়িয়ে দেওয়াল জুড়ে
ক্যালেন্ডারের পাতার সুরে
             করাত দিয়ে কেউ যেন কী কাটে !

তিন্নি / আবদার রশীদ

...
ঝন্ ঝন্ দুম দাম
        গেল ঘরদোর কি ?
আণবিক বোমা ফাটে ?
        নাকি এলো বর্গি ?
প্যালপিটেশান বাড়ে,
        কানে লাগে তালা রে,
কে কোথায় রয়েছিস্ -
        জান নিয়ে পালা রে !
ভয়ে ভীত মেহমান
        যেই যাবে পালাতে,
বাড়ির গিন্নি আসে
        খানা নিয়ে থালাতে !
"আরে আরে, ভয় নেই"
        হেসে বলে গিন্নি
"ও ঘরেতে আমাদের
        ছোট মেয়ে তিন্নি
খেলছে, যেমন খেলে
        আনমনে নিত্য ।"
মেহমান হতবাক
        শঙ্কিত চিত্ত ।
...

খট্কা / আবদার রশীদ

...
         (১)
ঘুড়ি ওড়ায়, বেলুন ওড়ায়
        পায়রা ওড়ায় বেশ জানি,
রুমাল ওড়ায়, ঝাণ্ডা ওড়ায়,
        ধোঁয়া ওড়ায়, তাও জানি,
কিন্তু আমার খট্কা লাগে
যখন শুনি নবাববাগে,
কে নাকি কোন মেলায় গিয়ে
পয়সা ওড়ায় দু'হাত দিয়ে !

রঙদার / আবদার রশীদ

...
সাদা, কালো, লাল রঙ
          বিশেষণে ভরা,--
হলুদ, সবুজ, নীল,
          তাই মনমরা ।

কালোর বুঝিনা বাপু
          এত সখ কিসে,--
কভু হবে 'কুচকুচে'
          কভু 'মিশমিশে' ।

'টুকটুকে' হয়ে শুধু
          লাল নয় শান্ত,
'টকটকে' হতে হবে
          নইলে প্রাণান্ত ।

ঐতিহ্য / আবদার রশীদ

...
(১)
মোর পাতে ঘি,
তোর তাতে কি
কিসের রে চোখ গরম-করা ?
আমরা হলাম
রাজার গোলাম
পঞ্চপুরুষ-পরম্পরা ।

(২)
দাদার দাদা
রাজ-পেয়াদা
চুটিয়ে আদায় করত মোহর,
দাদা সাহেব
খাস মোসাহেব
কচলাতো হাত অষ্টপ্রহর ।

পরামর্শ / আবদার রশীদ

...
হ্যাঁ রে !
এই নাকি তোর ঘর ?
বেড়ার গায়ে হাজার ফুটো
নেইকো চালে খড় !
কেন !
দোষ কি পাকা ঘরে ?
না হয় ক'টা এয়ার-কুলার
লাগিয়ে নিলি পরে !

হ্যাঁ রে !
এই নাকি তোর খাওয়া ?
দেখছি কেবল হাঁড়িকুঁড়ি
ভাঙ্গা মাটির তাওয়া !
কেন ?
ফ্রিজ রাখলেই হয় !
এর ভেতরে মাছ মাংস
দিব্যি তাজা রয় !

হ্যাঁ রে !
পোষাক কি তোর এই ?
ছেঁড়া একটা লুঙ্গি পরিস
গায়ে জামাও নেই !
কেন ?
সুটটাও তো পোষাক !
তেমনি ক'সেট বানিয়ে নিয়ে
ওয়ার্ড্রোবেতে রাখ্ ।
...

ভাগাভাগি / আবদার রশীদ

...
আয় ভাই, ভাগ ক'রে
                নিই জমিদারী,-
আমি রাখি জমিটুকু,
                তুই রাখ্ দাড়ি ।

আমি নেব হাতিশালে
                যত হাতি, আর
তুই নিস্ ছুরি কাঁচি
                যত হাতিয়ার ।

তারপরে ভাগ করি
                এই ঘোড়াশাল,--
আমি নেব ঘোড়াগুলো
                তোকে দেব শাল !

ভিটেমাটি সব কিছু
                ভাগ করে নেব,--
আমি যদি ভিটে পাই
                তোকে মাটি দেব !
...

শ্যামল বরণ রূপে / রাধারমণ দত্ত

...
শ্যামল বরণ রূপে মন নিল হরিয়া
কুক্ষণে গো গিয়াছিলাম জলের লাগিয়া
কারো নিষেধ না মানিয়া সখি গো ।।
আবার আমি জলে যাব ভরা জল ফেলিয়া
জল লইয়া গৃহে আইলাম প্রাণটি বান্ধা থুইয়া
আইলাম শুধু দেহ লইয়া সখি গো ।।
কি বলব সই রূপের কথা শোন মন দিয়া
বিজলি চটকের মতো সে যে রইয়াছে দাঁড়াইয়া
আমার বাঁকা শ্যাম কালিয়া সখি গো ।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
মনে লয় তার সঙ্গে যাইতাম ঘরের বাহির হইয়া
আমি না আসব ফিরিয়া সখি গো ।।
...

আমি তোমায় ডাকি গুরু / রাধারমণ দত্ত

...
আমি তোমায় ডাকি গুরু হে
ডাক দিলে ডাক শুনো না ।
সাধন-ভজন কিছুই জানি না ।।
গুরু গুরু আমি তোমার অধম ভক্ত
লোহা হতে অধিক শক্ত
আগুন দিলে লোহা গলে
গুরু আমার মন তো গলে না ।।
ভাইবে রাধারমণ বলে ভবে আইলাম অকারণে
আমার মনের এই বাসনা, গুরু রাঙাচরণ ছাড়ব না ।।
...

প্রাণ সখিরে / রাধারমণ দত্ত

...
প্রাণ সখিরে
ঐ শোন কদম্বতলে বাঁশি বাজায় কে ।
বাঁশি বাজায় কে রে সখি, বাঁশি বাজায় কে ।।
এগো নাম ধরিয়া বাজায় বাঁশি
তারে আনিয়া দে ।
অষ্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশি
মধ্যে মধ্যে ছেদা
নাম ধরিয়া বাজায় বাঁশি
কলঙ্কিনী রাধা ।।
কোন বা ঝাড়ের বাঁশের বাঁশি
ঝাড়ের লাগাল পাই ।
জড়ে পেড়ে উপরাইয়া
সায়রে ভাসাই ।।
ভাইবে রাধারমণ বলে
শুন গো ধনি রাই ।
জলে গেলে হবে দেখা
ঠাকুর কানাই ।।
...

কারে দেখাবো / রাধারমণ দত্ত

...
কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো আমি বুক চিরিয়া ।
অন্তরে তুষেরই অনল জ্বলে গইয়া গইয়া ।।
ঘর বাঁধলাম প্রাণবন্ধের সনে কত কথা ছিল মনে গো ।
ভাঙ্গিল আদরের জোড়া কোন জন বাদী হইয়া ।।
কার ফলন্ত গাছ উখারিলাম কারে পুত্রশোকে গালি দিলাম গো ।
না জানি কোন অভিশাপে এমন গেল হইয়া ।।
কথা ছিল সঙ্গে নিব সঙ্গে আমায় নাহি নিল গো ।
রাধারমণ ভবে রইল জিতে মরা হইয়া ।।
...