Saturday, May 22, 2010

নিরঞ্জনের লাশ / আকা ফিরোজ আহমেদ

...
(জগন্নাথ হল দুর্ঘটনা যার উৎস)

মরার আগে নিরঞ্জনকে তোমরা চিনতে না।
আমি ওকে চিনতাম ও যখন জীবিত ছিলো
মরার পর ওকে আমি চিনতে পারিনি
বিশ্বাস করো ওকে আমি চিনতে পারিনি।

ভাঙা ছাদের নীচ থেকে
নিষ্প্রাণ গাদা গাদা হাড় মাংস এনে তোমরা বলেছো,
এ নিরঞ্জন
আমি চিৎকার করে বলেছি, না
বিচূর্ণ মস্তক দেখিয়ে বলেছো, এ নিরঞ্জনের মাথা
আর কোন দিন কথা বলবে না
আমি চিৎকার করে বলেছি, না
ছিন্ন হাত দেখিয়ে তোমরা বলেছো,
এ-তো নিরঞ্জনের হাত, দেখো সেই কালো তিল
আমি বলেছি, না, না
ঠিকরে পড়া চোখ, চাপ চাপ রক্ত, ভাঙা দাঁত
ছিটকে যাওয়া মগজ ওসব কিছুই নিরঞ্জনের নয়।

জীবিত নিরঞ্জনের সাথে আমার জানাশোনা ছিলো,
ওর বালিশের নীচে থাকতো মায়ের চিঠি
হাতের আস্তিনে বোনের স্বপ্ন
ছুটিতে বাড়ি আসা
নমিতাদির হাতের কাসুন্দি, বাসুদার বাগানের আম
গাঙ্গুলী বাড়ীর দিঘিতে অবাধ সাঁতার,
নিরঞ্জন ভালো সাঁতারু ছিলো
সাঁতরে সাঁতরে কাটাতো জীবন।

বাবার পাঠানো সামান্য টাকা ওকে ডুবাতে পারতো না
গলার পৈতা ছুঁয়ে ও সাঁতারে যেতো।
সকাল বিকাল দুবেলা টিউশনিতে
দাম্ভিক ছাত্রীর মুখোমুখি নিরঞ্জন ডুবতো না
অহংকারী আমলার স্ত্রীর কৈফিয়তের কাছে
নিরঞ্জন ডুবতো না
সাঁতরে সাঁতরে রুমে ফিরে এসে প্রায়ই চিৎকার করতো,
অমলেশ আর কতকাল শ্রম দিয়ে করুণা কুড়াবো
পড়াবার নামে সেবা করে যাবো আমাদের শত্রুর
সকাল বিকাল দেহের রক্তে রক্তে
চেরাগ জ্বালাবো লুটেরার ঘরে ?
অমলেশ চল্ উল্টে দেই ঘরগেরস্থালি
ক্ষমতার শেকড় প্রতিটি ভবনের ছাদ
অমলেশ চল্।

নিরঞ্জন তখন জীবিত ছিলো আমি ওকে চিনতাম
ও ভোরের গান গাইতো,
ও ভাঙার গান গাইতো
তোমরা শুনতে না
তোমরা চিনতে না ওকে।
শহরেও বিশাল ভবনের প্রতি ওর ক্ষোভ ছিলো ভীষণ
ও উল্টে দিতে চেয়ে ছিল ছাদ
শেষে ছাদই উল্টে দিলো ওকে

বিশ্বাস করো মরার পর নিরঞ্জনকে আমি চিনতে পারিনি।
...

No comments:

Post a Comment