Friday, November 20, 2009

অন্য মা / রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

...
    আমার মা না হয়ে তুমি
            আর কারো মা হলে
    ভাবছ তোমায় চিনতেম না,
            যেতেম না ওই কোলে ?
    মজা আরো হত ভারি,
    দুই জায়গায় থাকত বাড়ি,
    আমি থাকতেম এই গাঁয়েতে,
            তুমি পারের গাঁয়ে।
    এইখানেতেই দিনের বেলা
    যা-কিছু সব হত খেলা
    দিন ফুরোলেই তোমার কাছে
            পেরিয়ে যেতেম নায়ে।
    হঠাৎ এসে পিছন দিকে
    আমি বলতেম, “বল্ দেখি কে ?”
    তুমি ভাবতে, চেনার মতো,
            চিনি নে তো তবু।
    তখন কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে
    আমি বলতেম গলা ধরে-
    “আমায় তোমায় চিনতে হবেই,
            আমি তোমার অবু!”

    ওই পারেতে যখন তুমি
            আনতে যেতে জল,-
    এই পারেতে তখন ঘাটে
            বল্ দেখি কে বল্ ?
    কাগজ-গড়া নৌকোটিকে
    ভাসিয়ে দিতেম তোমার দিকে,
    যদি গিয়ে পৌঁছোত সে
            বুঝতে কি, সে কার ?
    সাঁতার আমি শিখিনি যে,
    নইলে আমি যেতেম নিজে,
    আমার পারের থেকে আমি
            যেতেম তোমার পার।
    মায়ের পারে অবুর পারে
    থাকত তফাত, কেউ তো কারে
    ধরতে গিয়ে পেত নাকো,
            রইত না একসাথে।
    দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে
    দেখা-দেখি দূরে দূরে-,
    সন্ধেবেলায় মিলে যেত
            অবুতে আর মা-তে।

    কিন্তু হঠাৎ কোনোদিনে
            যদি বিপিন মাঝি
    পার করতে তোমার পারে
            নাই হত মা রাজি।
    ঘরে তোমার প্রদীপ জ্বেলে
    ছাতের ’পরে মাদুর মেলে
    বসতে তুমি, পায়ের কাছে
            বসত ক্ষান্ত বুড়ি,
    উঠত তারা সাত ভায়েতে,
    ডাকত শেয়াল ধানের খেতে,
    উড়ো ছায়ার মতো বাদুড়
            কোথায় যেত উড়ি।
    তখন কি মা, দেরি দেখে
    ভয় হত না থেকে থেকে,
    পার হয়ে, মা, আসতে হতই
            অবু যেথায় আছে।
    তখন কি আর ছাড়া পেতে ?
    দিতেম কি আর ফিরে যেতে ?
    ধরা পড়ত মায়ের ওপার
            অবুর পারের কাছে।
...

No comments:

Post a Comment