...
বীজটা হঠাৎ খুললো কপাট বনের নিরালায়
দেখি,- ভেতরে এক বৃক্ষ-শিশু
সবুজ সবুজ চোখ মেলে তার পিটপিটিয়ে চায়।
আমায় দেখে বললো ডেকে-
‘কী গো খোকা খুঁজছো কিছু?
বলতে পারো আমার কাছে খোলে নির্দ্বিধায়।’
গাছ কি কথা বলতে পারে?
মনে মনে খটকা বাড়ে,
তবু তাকে কেমনে বলি-
হারিয়ে যাওয়া সেই পাখিটা
ছোট্ট আমার ইচ্ছে পাখি
আধেক কথা বললে যাকে
বলে দিতো আর বাকীটা।
যখন-তখন ঝুট-ঝামেলা
বাঁধাতো যে সারাবেলা,
খোলা আকাশ টানলো তাকে- টানলো সবুজ বন?
বুকের খাঁচা রইলো খোলা, নেই সেখানে মন!
আমার কথা বুঝলো কি না
ঠিক জানি না,
বললো সে ফের- ‘এসো আমার কাছে,
তোমার পাখি যায়নি কোথাও এই এখানেই আছে।
ওই দেখোনা সবুজ আকাশ
লাল তারা আর নীল মেঘেদের ভীড়ে
আরো কতো ইচ্ছে পাখি উড়ছে ঘুরে-ফিরে।’
অবাক ভারি,- বীজের ভেতর আকাশ থাকে!
চাঁদ- সূর্য তারাও থাকে?
হি-হি হেসে বললো সে ওই-
‘তুমিও তো বীজের মতোই,
সব বীজেরই বুকের ভেতর সেই সে আকাশ থাকে
ইচ্ছেগুলো আকাশটাতেই রঙ ভরিয়ে রাখে।
ভয় কিছু নেই-
আমার আকাশ দেখতে কি চাও?
চোখ মেলো ওই মন-জানালায়।’
তার কথাতে উঁকি দিতেই-
কোত্থেকে এক সবুজ চাদর জড়িয়ে গেলো গায়!
অমনি হঠাৎ চমকে দেখি- কী ভয়ানক,
কোথায় আমার গা!
আগা-গোড়াই বৃক্ষ-চারা, শেকড় আমার পা!
হাত দুটোও ডাল হয়ে সব পাতার বোঁটায় বাঁধা,
সবুজ পাতার অবুঝ চোখে লাগলো বুঝি ধাঁ-ধা!
তাহলে কি গাছই হলাম, সটান সোজা গাছ?
দৌঁড়বো না আর খেলবো না আর-
ছুটবো না কি পুকুর ঘাটে, ধরবো না আর মাছ?
ঘাটের পাশের কেওড়া ঝোপে পেতে দিয়ে কান-
চুপি-চুপি শুনবো না আর ঝিঁ-ঝিঁ পোকার গান?
মজা আলোয় সন্ধ্যা নামে গুমড়ে ওঠে বুক-
থেকে থেকে ওঠছে ভেসে মায়ের আকুল মুখ।
কী করে যে মা-কে জানাই
তাঁর খোকা আর সেই খোকা নাই
কেমনে যাবে মায়ের কাছে-
মাটির শেকল গাছ-শরীরে বাঁধা,
মুখটাও কি তেমনি আছে!
যাবে কি আর আগের মতো কাঁদা?
হঠাৎ শুনি-
‘কী রে পাজি, ডাকছি এ-তো!
চল্ চল্ চল্ খেতে যাবি’- মা এগিয়ে আসে,
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো বুঝি ;
জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি-
দুষ্টু-মুখু গাছগুলো সব খিলখিলিয়ে হাসে!
...
Friday, November 20, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment