Wednesday, November 11, 2009

হঠাৎ-দেখা / রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 ...

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা ,
ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন ।।

আগে ওকে বারবার দেখেছি
লাল রঙের শাড়িতে --
দালিম-ফুলের মত রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলন-চাঁপার মত চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে ।
মনে হল, কাল রঙের একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে ,
যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে ।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা :
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে ।।

হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার ।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে :
আলাপ করলেম শুরু --
'কেমন আছো ', 'কেমন চলছে সংসার '
ইত্যাদি ।
সে রইল জানালার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে ।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব ,
কোনটা বা দিলেই না ।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় --
কেন এ-সব কথা ,
এর চেয়ে অনেক ভাল চুপ ক'রে থাকা ।।

আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে ।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে ।
মনে হল কম সাহস নয় --
বসলুম ওর এক বেঞ্চিতে ।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে ,
'কিছু মনে কোরো না ,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার !
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই ;
দূরে যাবে তুমি ,
তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে ,
শুনব তোমার মুখে ।
সত্য করে বলবে তো ?'
আমি বললাম ,'বলব ।'
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
'আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে --
কিছুই কি নেই বাকি?'

একটুকু রইলেম চুপ করে ;
তার পর বললেম ,
'রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে ।'

খটকা লাগল , কী জানি বানিয়ে বললেম নাকি ।
ও বললে , ' থাক এখন যাও ও দিকে ।'
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে ।
আমি চললেম একা ।
...

No comments:

Post a Comment