Tuesday, November 10, 2009

ছিন্নমুকুল / সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

...
সবচেয়ে যে ছোটো পিঁড়িখানি
             সেইখানি আর কেউ রাখেনা পেতে,
ছোট থালায় হয় নাকো ভাত বাড়া,
             জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে;
বাড়ির মধ্যে সব-চেয়ে যে ছোটো
             খাবার বেলা কেউ ডাকে না তাকে,
সব-চেয়ে যে শেষে এসেছিল,
             তারই খাওয়া ঘুচেছে সব-আগে ।

সব-চেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি
             খুশি ছিল ঘেঁষাঘেঁষির ঘরে,
সেই গেছে, হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে,
             দিয়ে গেছে, জায়গা খালি করে ।
ছেড়ে গেছে পুতুল, পুঁতির মালা,
             ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি;
ভয়-তরাসে ছিল যে সব-চেয়ে
             সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি ।...


চ'লে গেছে একলা চুপে চুপে--
             দিনের আলো গেছে আঁধার ক'রে;
যাবার বেলা টের পেলো না কেহ,
             পারলে না কেউ রাখতে তারে ধ'রে।
চলে গেলো, --পড়তে চোখের পাতা,--
             বিসর্জনের বাজনা শুনে বুঝি !
হারিয়ে গেলো--অজানাদের ভিড়ে,
             হারিয়ে গেলো-পেলাম না আর খুঁজি।

হারিয়ে গেছে--হারিয়ে গেছে, ওরে !
             হারিয়ে গেছে বোল-বলা সেই বাঁশি
হারিয়ে গেছে কচি সে মুখখানি,
             দুধে-ধোওয়া কচি দাঁতের হাসি।

আঁচল খুলে হঠাৎ স্রোতের জলে
             ভেসে গেছে শিউলি ফুলের রাশি ,
ঢুকেছে হায় শশ্মানঘরের মাঝে
             ঘর ছেড়ে তাই হৃদয় শশ্মান-বাসী ।

সবচেয়ে যে ছোটো কাপড়গুলি
             সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে,
যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোটো
             আজকে সেটি শূন্যে পড়ে কাঁদে,
সব-চেয়ে যে শেষে এসেছিলো
             সে গিয়েছে সবার আগে সরে
ছোট্ট যে জন ছিল রে সব চেয়ে
             সে দিয়েছে সকল শূন্য করে ।
...

1 comment: