...
রিকশার চাকা দুটো ঘুরতে-ঘুরতে এইখানটায় এসে দাঁড়ায় । আমার বাড়ির সামনে অপেক্ষা করে।
যে লোকটা চালায় একদিনও তার কামাই নেই, এই বিষম ঠান্ডাতেও না । এমনকি তাকে দেখে আমার চেনবার কথা নয়, কারণ তার মুখটা রোজই বদলায় । চাকা দুটোর ঘোরা থেকে চিনি ।
সন্ধের পর ছেলে-বউকে অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিয়ে সে বেড়িয়ে পড়ে । কোন মহল্ল থেক তা আমার কাছে পরিস্কার নয় । শুধু এইটুকু বুঝতে পারি, ভুতুড়ে আলোগুলো পার হয়ে গেলে একটা যে প্রকান্ড শীতের রাত পড়ে, তার ওপারে সে থাকে । যেখানেই থাকুক কিছু আসে যায় না ।
আমার বাড়িটা যে তার চেনা, আমাদের দুজনের পক্ষে এটাই বড় কথা ।
শীতের ঢেউ যে সব রাস্তায় আছড়ে পড়ে সেই সব রাস্তা দিয়ে রিকশা চড়ে আমি অনেকবার গিয়েছি । তখন মানুষটার মধ্যে আগুন গনগন করতে দেখেছি, যেন তার অস্থিমজ্জা জ্বলছে ।
আমার গায়ে সেই আঁচ এসে লেগেছে । তার সুতির ফতুয়াটা তখন তীব্রভাবে উড়তে থাকে এবং
আমার ভয় হয় আমার গরম জামাকাপড় বুঝি দাউদাউ করে জ্বলে উঠবে । কিন্তু না, প্রত্যেকবারই সে ভুতুড়ে আলোগুলোর ভেতর দিয়ে আমাকে আবার এখাে ঠিকমত পৌঁছে দিয়েছে । এমন কি ,তার বাড়িটা যে একসময় খুব কাছাকাছি এসে গিয়েছিল, এ অনুভুতিটাও আর লেশমাত্র থাকেনি । আজও সে আমাকে নিয়ে শীতের রাতের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং নিরাপদে আবার ফিরিয়ে আনবে ।
খুব সম্ভব কোনো একদিন সে আর আসতে পারবে না । ভেতরের আগুনটা নিবে গিয়ে সে ঠান্ডায়
জমে পাথর হয়ে কোথাও পড়ে থাকবে । কিন্তু তা বলে রিকশার চাকা দুটো তো মাটিতে গেড়ে
যাবে না । তারা আবার ঘুরবে এবং তাই থেকে আমি বুঝব সেই রিকশাওয়ালা হাজির হয়েছে, এখন যেমন বুঝি । এটাই আমার কাছে এক স্বস্তি ।
...
Wednesday, November 11, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment